Monday, May 4, 2009

জার্নাল: ঘুমপার্ক থেকে

জার্নাল: ঘুমপার্ক থেকে

চড়ুই পাখিটা এসেছিল
আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগে
রোদ্দুরকে দেখেছিলাম আমার গলা অবধি
একটা উমের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে,
দূর থেকে কানে ভেসে আসছিল-
কে যেন সাদা পুকুরের উপর রিনি ঝিনি করে
পা মেলাচ্ছে, বাজছে খয়েরি ভায়োলিন
আর ফুটে উঠছে আস্ত লাল লাল পদ্ম
সেই সুর আমি আজও মনে করতে পারি
মনে করতে পারি দুচোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে

একটি বার্চ গাছ তার খোলস বদলে দাড়িয়ে রয়েছে
তাকেও দেখেছি কিছুটা বিহ্বল, শ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন
গালে লাল লাল ছোপ, বলছে-
আমার ডালে ডালেও সে কিছুটা ছুটোছুটি করেছিল
আঙুলগুলো এত নরম যে মার কথা মনে পড়ে
আমার ঘুমিয়ে পড়ার ভেতরে তার সবুজ স্তন
বারবার ফিরে ফিরে আসে


কি সব কাণ্ড কারখানা যে ঘটে ঘুমিয়ে পড়ার পরে
সব বোঝা মুশকিল, কিন্তু সেই চড়ুই পাখিটা?
আর তার ভেজা পালকের গান?

পার্কের ভেতরে সারি সারি বার্চ গাছ
তাদের মাথায় সবুজ রঙের স্কার্ফ
পুকুর জুড়ে জল শিউরে শিউরে উঠছে
আর থেকে থেকে কে যেন রিণরিণে গলায় বলছে-
তোমার ঘুমটুকু টুক টুক করে খেয়ে নিয়ে
চড়ুই পাখিটা ঘুমোতে চলে গেছে

স্কেচবুক

ট্রেন থেকে বাড়িগুলো দেখা যায়
দূরে বনভুমি- হলুদ পাতার ফাকেঁ
জীর্ণ শীর্ণ চোখ ঘুরে ঘুরে যায়
আর উঁচু নিচু হয়ে ছানাপোনা নিয়ে
শান্ত বাড়িগুলি লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে

হাওয়ার শন শন শব্দ বেজে ওঠে
চমকে তাকিয়ে দেখি-
যে বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি
তার দরোজাটা হাট করে খোলা
একটা জুবুথুবু ছায়া নেমে এসেছে
ঘর থেকে পেভমেন্ট অবধি, প্লাস্টিকের টবে
সদ্য গজিয়ে ওঠা ভারবেনার পার্পল পাপড়িতে
আর একপাশে হেলে রয়েছে সবুজ কুকুর
স্তব্ধ দুটি কান, একটি আধ ভাঙা, খয়েরি…
কিছু না বলে মাঝ রাত্তিরে চাঁদ
ফিরে গেছে একা একা

কনকনে হাওয়ার মধ্যে
বাড়িটার ছাদে ঝুলে পড়েছে ক্লান্ত মেঘ
রেল-পুলিশ ঢুলছে জানালার পাশটিতে
যার যার ঘুম এইভাবে সেরে নিচ্ছে

শিশুর কান্নার শব্দে অনেক সময়
সত্যি সত্যি আমাদের চোখ খুলে যায়
অনেক সত্যি আমরা সত্যি করে দেখতে পাই
এইজন্য ঘুমিয়ে পড়ার আগে-
বার কয়েক মুছে নেই চশমার কাঁচ

ট্রেন থেকে দেখা যায়-
বাড়িগুলো ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে
তার ছানাপোনাগুলোও উধাও
সব কিছু তেড়ে ফুঁড়ে জেগে উঠছে
একটি নির্জন খা খা সাদা প্রান্তর

আর তার গা বেয়ে চুয়ে নামছে জল রং
ভিজে জবজবে ছবির কাগজ

০৫/০৩/২০০৯

Tuesday, April 28, 2009

নিউ ইয়র্কের কবিতা


পরিযায়ি গান

আলোর উৎসমুখ যে তুমি হে ধেণু
পিপাসার্ত আমি,পান করাও তোমার কাম্যজল
হরষিত হোক ধূম উদ্গীরণের অগ্নি-
পুনর্বার স্নাত হই

দস্যুচিহ্নিত কোন ভূমি নয়
আমরা যেচে নিয়েছিলাম রাত্রিপ্লাবী ঘৃণা আর
পিতার মুর্খমুখোশ

পাহাড় থেকে যারা ফিরেছিলো ধ্বস্ত ছিল তাদের হস্তযুগল
অক্ষিকোটর থেকে উৎপাটিত তাদের চোখ
ত্রস্তকান্ত আমরা সবাই ছিলাম আয়ূধবিহীন
আমাদের পদতল থেকে একটু একটু করে ভেসে গিয়েছিল
একটি বাশিঁ আর ভেষজের নম্র বিজ্ঞান
তপোবন লুণ্ঠিত বলে আমাদের মাতৃনাম সহসা নিখোঁজ

তোমরা বলেছ বলেই নদীবক্ষ্যে উঠেছে ঘূর্ণি
সহসা ধূলার আড়াল থেকে তবুও সরিয়ে নিয়েছে বস্ত্রাবরণ
সেই প্রথম আমরা জ্ঞাত হই- যৌনতায় কোন গন্ধভেদ নেই
দণ্ডহীন তামসবিকার,হে ধেণু,তারপর
রক্তপাত চলেছে কপট কীড়ায়-নগরে-ধর্মক্ষেত্রে-ঘুমন্ত শিয়রে
তবুও আয়ূষ্মান-তোমরাই কবি,আমরাতো প্রদোষের প্রতিবিম্বগণ

হে ধেণু,পশুচিহ্নিত নখাগ্রে কোন দূরনীরিক্ষ জ্যোৎস্না নয়
তখন চমকিত হয় আত্মহত্যার মতোন যৌনগন্ধী মেঘ
আর আমরা দাড়িয়ে রয়েছি প্রান্তর ছেড়ে খাদের কিনারে
যুযুধান মৃত্যুরহিত

তবুও প্রাণবন্ত করছ হে ধেণু,অবীজি ব্রীহি আর সুপক্ক গোধূমচূর্ণ
খল খল করে বয়ে চলেছে সে কোন খরসান নদী
তীরে তার অরণ্যচারী মৃগদল আর হৃতবান ফলবীথি

নিজেরই ছায়ার ভিতরে শুনছি দ্রিমি দ্রিমি গান
ঝলসিত মাংসে মেশাচ্ছি বহুকাল ধরে
আমাদের আনন্দিত কুন্দকুসুম
হে ধেণু,সে আমার বেদনার বনচর বোন

যতবার দেখেছি তাকে,ততবার অপসৃয়মান পিতা
চতুর্দিক থেকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন জায়মান চারটি প্রবল মুখ
আর হাহাকার

হে ধেণু,তৃষ্ণার্ত আমি,যাচমান অন্ধকারে
কুচভারে নত নই,আলোর উৎস ছেড়ে
যে তুমি আমার প্রতীম
আমাকেই উপ্ত করি আমার নিভৃতে





ছায়াপাখি/আনন্দ রোজারিও

এ গান শুনেছি আমি খরসান হাওয়ার ভিতরে
অনন্ত পাখির প্রায় আমিও জেনেছি-
যে সকল পাতা ঝরে পড়ে
নবীন মুকুল এসে ক্ষত সেরে রাখে তার
তবু কেন মনে পড়ো তুমি হে মুরলী মোহন?
রচো কেন গুপ্ত প্রণয়? নিঝুম মধুক্ষরা দিন?

গাছে গাছে বিলাপের ফুল ফুটে ওঠে
তাই আমি ক্ষীণ স্রোতধারা পার হয়ে যাই
অপার পায়ের নীচে সুরভিত পথরেখা
স্তব্ধপ্রায় মুথাঘাস
রথ চলে গেছে বহু দূর
যে গেছে এ পথে আজ তার কোন নাম নয়-
ধুলি ধুসরিত মায়া পড়ে আছে পথের উপরে

এই পথ হ্রস্ব মনে হয়,যদিও সুদূর

পাখি তুমি কোন গান গাও?
কেন তাকে ফিরে ফিরে ডাকো?
যে যায় লাবণ্য বনে সে কি আর ফিরে আসে?

এই হেতু দুপুরের কোনে কোনে
খরসান হাওয়া ওঠে,বারবার ঝরে পড়ে পাতা

কত হাহাকারে পাখি তুমি নিরাকার ছায়া

২৫ জানুয়ারি/২০০৯
পাতাবৃত্যান্ত

আমি পাতাদের লোক।
দুএকটা শোক ছুয়েঁ আছি।
হেঁটে হেঁটে পাড়াগুলো পার হই।
শীর্ণ শীর্ণ পাড়া।ধুলো নেই। বালি নেই।
মর্মরিত ঝরে পড়া নেই।
আকাশের ঘুরে আসা নেই।

দু’একটা পুলিশ সহসা ছুটে আসে।
ঘিরে ধরে বলে- কার বাড়ি যেতে চাও?
শালিকের? ঝিনুকের? চেনা কোনো হাওয়াদের?

খয়েরি পুলিশ চেয়ে থাকে।
গোল গোল চোখ- জ্বলে আর নেভে।
পায়ের পাতার কাছে অন্ধকার ফুসে ওঠে।

আমি পাতাদের লোক।
আলো ভালবাসি।
সবুজের মর্মে জেগে থাকি।
তোমরা তো ছায়াতে বিভোর!

কার পানে যাই?
কোনদিকে ফিরে ফিরে যেতে চাই?
ঠিক মনে নেই।
এখন দুপুর-
ভোর বেলা ডেকেছিলে।

শুধু জানি-
শিশির ভেজানো পথে যারা হেটে যায়,
তাদের পায়ের চিহ্ণ জেগে থাকে ঘাসে।


Sunday, April 26, 2009

ধানকাজ

হা তীর্থ নদী জল করতলে খননের দায়
সন্তাপে কাঁপে বুক উঠে আসে শ্যামা ঘাস
দীর্ঘ ফলার নিচে ডিম ভাঙ্গে, খোসা বেয়ে খলখল রক্ত কোমল
চেপে বসা মাটিদেহ, মা তোমার অননে-র জঁইফুল-
কানের লতিকা ছুঁয়ে জেগে ওঠে অঙ্কুরিত নম্র বিছানা

আমিও জনক রাজা- শাপমন্যি করি চাষ
ভোরের শিশুটি হাঁটে একহাত দূরে দূরে- হাতে পাপড়ির ক্রোধ
আমাদের ত্বকের ভিতরে রোজ সূর্য ডোবে
জ্বলে ওঠে নিষ্পত্র সারি সারি মৃতরাত

এসেছে কালক্ষুধা বাসনা চতুর
গুণে গুণে বুনে গেছি আমাদের করোটিতে আদি পাপ
শেকড় মহিমা মেনে ধানের স্বভাব

মা তোমার যতটুকু আলো অনঙ্গের গীতল বাতাস
অযোনিসম্ভূত দুধ- ঢালো তরল ক্ষমতা- ঢালো জ্ঞান
বংশ পরম্পরা ভেদে ঢেলে দিও হাড়ের ইশারা

তারপর আছে রোদ খরার প্রাচীন খেদ
বৃষ্টিমাছ লাফ দিয়ে বাড়ে পালায় কুশির নিভৃতে
জলের ঘটনা তবু লিখে নিও
লিখো পতঙ্গ প্রবল দিন শিলাঘাতে ঝড়ের তৃষ্ণা জেনো
গর্ভিনীর সহজ পতন
আমি নই তোমার ঘাতক- আছেন বণিক প্রধান
আরও কিছু লেখাজোঁকা কষ্টে প্রবীণ

এই হেতু মা তোমার দুধ নয়, শীষে ফোটে বিষফুল
অননে-র ফলিত হলুদ